হয়রানির অভিযোগ উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগপত্র পেতে, সমাধানে নয়া বিজ্ঞপ্তি SSC-র

উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ (Upper Primary recruitment) প্রক্রিয়ায় কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী সমস্যার মুখে পড়েছে। তারা ইতিমধ্যে অনুমোদন পত্র হাতে পেয়েছে কিন্তু সমস্যা হয়েছে নিয়োগপত্র নিতে গিয়ে। আর তাদের এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে স্কুল সার্ভিস কমিশন (West Bengal Central School Service Commission)।

উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকতা করতে গেলে প্রার্থীদের কি কি শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগবে তা একটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে জানানো হয়েছে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে আরো একাধিক বিষয় উল্লেখিত রয়েছে। চাকরির নিয়োগপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে যে আর দফা শর্ত রয়েছে তাও উল্লেখ রয়েছে সেই বিজ্ঞপ্তিতে।

এই বিষয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানান, “যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগপত্র হাতে পেতে যাতে কোন‌ও অসুবিধা না হয়‌, তাই কী কী অ্যাকাডেমিক এবং প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশন প্রয়োজন, কমিশনের তরফ থেকে তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে।”

আরও পড়ুন: Jio এর একটি প্ল্যানে জব্দ হল Airtel-BSNL, 84 দিন পর্যন্ত আনলিমিটেড 5G ডেটা-কলিং সঙ্গে ফ্রি OTT

উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্কুল সার্ভিস কমিশন ইতিমধ্যেই প্রায় কয়েকশ চাকরি প্রার্থীর হাতে অনুমোদন পত্র দিয়েছে। ছ দফায় এই চাকরিপ্রার্থীদের হাতে অনুমোদন পত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পত্রের মধ্যে ‘গ্র্যাড উইথ বি.এড’ উল্লেখ রয়েছে।

অনুমোদন পত্র সঙ্গে নিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা স্কুলে গেলে সেখানে পুনরায় ভাবে তাদের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কিছু প্রার্থীর ডিএল‌এড রয়েছে কারও এক বছরের বি.এড আবার কারও চার বছরের বিএ/বিএসসি-এড ডিগ্রি রয়েছে।

কিন্তু ওইসব স্কুলগুলিতে প্রার্থীদের এই বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় তারা নিয়োগপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এই নিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়ে স্কুল পরিচালন সমিতি বা প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছে সরকারের নির্দেশ অনুসারেই স্কুলগুলি ভেরিফিকেশন করবে।

কারণ বিগত বছরে একাধিক কারণে কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফ থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ পরিচালক সমিতির সদস্যদের ডাকা হয়েছিল। তাই সরাসরি নির্দেশে উল্লেখ না থাকলে তা অসুবিধার সৃষ্টি করবে বলে জানাই স্কুলের শিক্ষকরা।

এই সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি জানান যে, “বিগত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে সরকারের নির্দেশের বাইরে আমরা কোন‌ও কাজ করতে পারি না। নিয়ম প্রণয়নের দায়িত্বে রয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। তারা যে বিজ্ঞপ্তি দেবে, সেই মতো স্কুলগুলি তা মানতে বাধ্য। যে কাজের সঙ্গে স্কুলের কোন‌ও যোগসূত্র নেই, সেখানে বিগত নিয়োগের ক্ষেত্রে ইডি, সিবিআইয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে এই নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত একাধিক প্রধান শিক্ষক ও পরিচলন সমিতির সদস্যদের।”

এর পাশাপাশি নয়া বিজ্ঞপ্তিতে কমিশনের তরফ থেকে ‘গ্র্যাড উইথ বি.এড’ এর পরিবর্তে ‘গ্র্যাড উইথ প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশন’ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রার্থীদের আটটি যোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলি থাকলে চাকুরীর নিয়োগ পত্রে ক্ষেত্রে কোন রকম বাধার সৃষ্টি হবে না।

এই নিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়ে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল জানান, “স্কুল সার্ভিস কমিশন অনুমোদনপত্র দেওয়ার সময়ে ভুল করে সবার ক্ষেত্রে একই কোয়ালিফিকেশন লিখেছিলেন। ফলে অনেকে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই ভুল না করলে পদপ্রার্থীদের এত হয়রানি হতো না।”

উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে প্রথম পর্বের তালিকা প্রকাশ করা হয় মোট ৮,৭৪৯ জন প্রার্থীকে নিয়ে। তার মধ্য থেকে ৬৫৮ জন প্রার্থীকে কাউন্সেলিং এর জন্য ডাকা হয়। এর মধ্যে অনুপস্থিত প্রার্থীর সংখ্যা হল ১৪৭ জন এবং দুজন প্রার্থী কাউন্সেলিংয়ে আসার পরেও অনুমোদন পত্র নেননি। মোট উপস্থিত প্রার্থীর সংখ্যা ৫০৯ জন।

উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারী চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের সভাপতি সুশান্ত ঘোষ জানান, “কাউন্সেলিংয়ের পর্ব চলাকালীন অনুমোদনপত্র প্রাপ্ত ডিএল-এড প্রশিক্ষণ সম্পন্ন প্রার্থীরা আমাদের হেল্প ডেস্কে এই বিষয়ে আলোকপাত করেন। মঞ্চের তরফে কমিশনে বিষয়টি এস‌এস‌সিকে জানানো হয়। যথারীতি কমিশন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যার ফলে বিদ্যালয়ে যোগদানে কোন‌ও প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হবে না।”

যেসব প্রার্থীদের কাউন্সেলিং এখনো বাকি রয়েছে তাদের আগামী ১১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ থেকে পুনরায় শুরু হবে। যা চলবে ২৭ নভেম্বর ২০১ পর্যন্ত। এর মাঝে শুধুমাত্র শনিবার ও রবিবার বাদে বাকি দিনগুলিতে কাউন্সেলিং হবে। আর ১২ ও ১৩ নভেম্বর, দু’দিন বন্ধ থাকবে নিয়োগ প্রক্রিয়া।

এই নিয়োগের বিষয়ে কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস জানান, “ভুল-বোঝাবুঝির ফলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছিল চাকরিপ্রার্থীদের। এই বিজ্ঞপ্তির ফলে তা পুরোপুরি সমাধান হবে।”

Leave a Comment